পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ২০ জন মনীষীদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী অন্যতম। তাঁর প্রকৃত নাম মহাত্মা নয়; তাঁকে এই উপাধিটি দিয়েছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গান্ধী সারাজীবন ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, দারিদ্রতা, কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন।হিন্দু ধর্মের তথাকথিত জাতিভেদ প্রথা, বর্ণপ্রথা ও নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। সনাতনী হিন্দু সদস্য হিসেবে তিনি নিজেকে গর্বিত অনুভব করতেন পাশাপাশি তিনি অন্য ধর্মের প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। মহাত্মা গান্ধী হিন্দু ধর্ম ও সম্পর্কে ভাবনা গুলো আমাদের পাঠকদের জন্য উপস্থাপিত করা হলো, এতে যদি বোধ গম্য হয় সনাতন ধর্মের প্রতি।
হিন্দুধর্ম
গান্ধীর ভাষায়, আমি এক সনাতনী হিন্দু, তবু হিন্দু ধর্মের নামে যা যা সাধারণত হয়, তাতে আমার শ্রদ্ধা নেই। অন্যথায়, সনাতনী বা অন্য কোনরকম হিন্দু বলে অভিহিত হবার ইচ্ছে আমার নেই।তাই সনাতন হিন্দুধর্ম বলতে আমি কি বুঝি, তা পরিস্কার বলে দেয়া দরকার। সনাতন শব্দটিকে আমি এর প্রকৃত অর্থে ব্যবহার করি।
নিজেকে সনাতনী হিন্দু বলি, কারণ,
১। আমি বেদ,উপনিষদ, পুরাণ,হিন্দুধর্মগ্রন্থ বলতে যা কিছু আছে, তাতে বিশ্বাস করি এবং তার ফলে অবতারের ও পুনজর্ম্মওে বিশ্বাস করি।
২। বর্ণাশ্রম ধর্মে বৈদিক সংজ্ঞা অনুযায়ী বিশ্বাস করি, এখনকার প্রচলিত বর্বর সংজ্ঞা অনুযায়ী নয়।
৩। গো-রক্ষায় আমি বিশ্বাস করি, কিন্তু সে- বিশ্বাস প্রচলিত বিশ্বাসের চেয়ে অনেক বৃহত্তর প্রেক্ষিতে।
৪। মূর্তিপূজার আমার অবিশ্বাস নেই।
বেদ বা অন্য ধর্মগ্রন্থ বিষয়ে আমি ইচ্ছা করেই দৈবী উৎপত্তি শব্দটি ব্যবহারে বিরত থেকেছি। বেবেদর অনন্য ঐশ্বরিকত্ব আমি বিশ্বাস করি না। বাইবেল, কোরাণ, জেন্দ্-আবেস্তা, সবই বেদের মতই দৈবী প্রেরণাজাত বলে আমার বিশ্বাস। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে আমার বিশ্বাস একথা বলে না যে, প্রতিটি শব্দ বা স্তোত্রকে দৈবী প্রেরণাজাত বলে মানতে হবে। এ সব অসমান্য গ্রন্থ সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান আছে এমন দাবিও আমি করি না। তবে ধর্মগ্রন্থাদির আবশ্যিক শিক্ষার সত্যতা জানি ও বুঝি, এ দাবি করব। যা যুক্তি ও নীতিবোধের কাছে গ্রহণীয় নয়, তেমন ব্যাখ্যার বন্ধন আমি মানি না, সে যত পাণ্ডিত্যপূর্ণই হোক না কেন। বর্তমান শঙ্করাচার্য ও শাস্ত্রীরা (যদি দাবি করেন) যে, হিন্দুধর্মগ্রন্থের সঠিক ব্যাখ্যা করছেন, সে দাবি একেবারে মানব না। অপরপক্ষে আমি মনে করি, এ সব বই সম্পর্কে বর্তমানে আমাদের যে ধারণা, তা ভয়ানক গোলমেলে। নিষ্পাপতা(অহিংসা), সত্য ও আত্মসংযম(ব্রহ্মচর্য) এ সব যারা পূর্ণরূপে আয়ত্ত করেনি, তাদের পক্ষে শাস্ত্র উপলব্দি সম্ভব নয়, হিন্দুধর্মের এ আপ্তবাণীতে আমার অকাট্য বিশ্বাস আছে। গুরুতে আমি বিশ্বাসী। তবে এ যুগে লক্ষ কোটি মানুষকে গুরু ছাড়াই চলতে হবে। কেননা, পূর্ণ পবিত্রতা ও জ্ঞানের সমাহার এখন দুষ্প্রাপ্য। তবে স্ব-ধর্মের সত্য জানে না বলে কারো হতাশ হবার কিছু নেই। কেননা সকল মহান ধর্মের মত, হিন্দুধর্মেরও মূল সত্যগুলি অপরিবর্তনীয়, সহজেই তা বোঝা যায়। সকল হিন্দুই ঈশ্বরে এবং তাঁর একত্বে, পুনর্জন্মে ও মোক্ষে বিশ্বাসী।
ধর্ম অনেক, ঈশ্বর এক
ঈশ্বর যদি এক হন, তবে ধর্মেই বা এক হইবে না কেন?
গাছের যেমন কোটি কোটি পাতা থাকে তেমনি ঈশ্বর এক হইলেও পৃথিবীতে যত মানুষ তত ধর্ম। আসলে কিন্তু সকলেরই মূলে সেই একই ঈশ্বর রহিয়াছে। এই সহজ সত্যটি আমরা বুঝিতে পারি না। কারণ আপনারা নিজেদের বিভিন্ন গুরুর শিষ্য বলিয়া মনে করেন এবং যত গুরু আছেন ধর্মও তত আছে বলিয়া ভাবেন (গুরুর মতবাদ এর উপর বিশ্বাস করে)। বস্তুতঃ যদিও আমি নিজেকে হিন্দু বলিয়া মনে করি, তথাপি আমি জানি যে আপনারা প্রত্যেকে অথবা সকলে ঈশ্বরকে যেভাবে পূজা করেন আমি অবিকল সেইভাবে করি না। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষই নিজের ভাবে ঈশ্বরকে পূজা করে।
মূর্তিপূজা
রামই আমার ঈশ্বর। আমার রাম- অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তিনি অজ, স্বয়ম্ভূ।তাই আপনারা বিভিন্ন ধর্মমতকে শ্রদ্ধা করুন এবং তাদের সম্বন্ধে উদার মনোভাব পোষণ করুন। মূর্তিপূজায় আমার আস্থা নাই,কিন্তু তথাপি তথাকথিত পৌত্তলিকতাকে আমি শ্রদ্ধা করি। ঈশ্বর সর্বভূতে বিরাজমান। সামান্য মাটির ঢেলাতে তিনি আছেন, পরিত্যক্ত নখেও তিনি বিদ্যমান। কাজেই যাহারা মূর্তিপূজা করে তাহারাও সেই একই ঈশ্বরের পূজা করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মূর্তি উপাসকও বটে, আবার মূর্তি উপাসনার বিরুদ্ধেও বটে। আমি মনেকরি যে, সকল সমবেত হিন্দু মুসলমান অথবা অন্য যে কোন ধর্মাবলম্বী শ্রোতমণ্ডলীও আসলে আমারই মত, তাঁহারা সে কথা স্বীকার করুন বা না করুন। মানুষ ভগবানের প্রতীকের জন্য পিপাসিত- তাই মসজিদ বা গীর্জা কি আসলে মন্দির নয়? ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, মানুষের একটিমাত্র কেশে যেমন তিনি আছেন, গাছ পাথরেও তিনি তেমনিই রহিয়াছেন। (চলমান)
সংগ্রহ ঃ ইন্ট্ররেনট থেকে
0 comments:
Post a Comment