রাশাদ রহমান
নাম তাঁর নুরু মিয়া। খেলনা বেহালা বাজানো এবং তা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় ৩১ বছর যাবৎ আছেন এই একই পেশায়। ঢাকার টিএসসি এবং এর আশপাশের এলাকায় যাঁরা যাওয়া-আসা করেন তাঁদের কাছে নুরু মিয়া পরিচিত মুখ। পুরো এলাকায় খেলনা বেহালা বাজিয়ে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।
ফলে নিয়মিতই বাজানোর ডাক পড়ছে পাড়ার ক্লাব থেকে তারকাখচিত হোটেলে কিংবা দরবার হলেও। বংশপরস্পরায় এ পেশায় আসেন নুরু মিয়া। নুরু মিয়ার দাদা বাদশা মিয়াই প্রথম বাদ্যযন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকার অধিবাসী বাদশা মিয়া কিভাবে এ খেলনা বাদ্যযন্ত্রটি আবিষ্কার করেন তার জবাব দিতে পারেননি নুরু মিয়া নিজেও।বাদশা মিয়া খেলনাটির মাটির অংশ বানিয়ে নিতেন রায়েরবাজারে কুমারদের কাছ থেকে। বাকি সব তৈরি করতেন নিজ হাতে। বেহালার তারের সঙ্গে ছড়ের ঘর্ষণে তুলতেন জনপ্রিয় গানের সুর। তাঁর মৃত্যুর পর এ শিল্পের হাল ধরেন নুরু মিয়ার বাবা মনু মিয়া। বাবার কাছেই নুরু মিয়ার বেহালা বাজানোর হাতেখড়ি। শৈশবেই এ বেহালায় তুলতে পারতেন হাজারো গানের সুর। ৬২ বছরে এসে এখন তিনি এ যন্ত্রটির ওস্তাদ। এরই মধ্যে এটি বাজাতে শিখিয়েছেন দুই শতাধিক ছাত্রকে, যাদের অর্ধেকই বিদেশি। নুরু মিয়া জানান, কেউ ছয় মাস শিখলে এটি বাজাতে পারে ভালোভাবে। তবে ধৈর্য না থাকলে শেখা কঠিন। পাঁচতারা হোটেল ও দরবার হলে বেহালা বাজানো আর ছাত্র শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি এখনো নিয়মিত বেরিয়ে পড়েন শিশুদের মাঝে বেহালা বিক্রি করতে। জনপ্রিয় গানের সুর তুলে হেঁটে চলেন এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লা। প্রতিদিন ১০-১৫টি বেহালা বিক্রি করতে তেমন বেগ পেতে হয় না। ৩০ থেকে ৫০ টাকায় কিনে আনন্দ পাওয়া যায় হাজার টাকার। মেলা আর উৎসবেই বেহালা বিক্রি হয় বেশি বলে জানালেন নুরু মিয়া। মেলার এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বাজালেই বিক্রি হয়ে যায় ৫০ থেকে ১০০ পিস। এই খেলনা বেহালা বাজানো শেখা কিংবা শুনতে চাইলে চলে যেতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। নুরু মিয়ার দেখা পেয়ে যাবেন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
0 comments:
Post a Comment