দুঃসহ গরমে যেকোন মুহূর্তে যে কেউ পড়তে পারে অসুস্থতায়। আবহাওয়ার তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার কৌশল আয়ত্ত করতে পারলেই সম্ভব অসুস্থতার হাত থেকে রেহাই পাওয়া। কিন্তু কিভাবে আয়ত্ত করবেন সেই কৌশল? কিভাবে দুঃসহ গরমে ঠাণ্ডা রাখবেন নিজেকে?
১. কমিয়ে আনুন শারীরিক পরিশ্রমঃ
না, এই গরমে বেশি ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। ব্যায়ামে বেড়ে যাবে শরীরের তাপমাত্রা। তবে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য যেটুকু ব্যায়াম করবেন তা যেন সীমিত থাকে। ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘেমে গিয়ে একাকার হয়ে ওঠার কথা ভুলে যান। বরং এ চিন্তাটা তুলে রাখুন শীতকালের জন্য। এখন খুব ভোরে হেঁটে আসুন খোলা বাতাসে। কিংবা সাঁতার কাটুন কিছুক্ষণ। ব্যস, এর বেশি কিছু নয়।
২. পানি খান পেটপুরেঃ
দুঃসহ গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় প্রচুর পরিমাণে পানি। সেই পানি পূরণ করার জন্য আপনাকে অনেক বেশি পানি খেতে হবে। এছাড়া স্বাভাবিকভাবেই গরমে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখতে হলে চাই পানি। শরীরে পানির অভাব হলে মাংসপেশী ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই দুঃসহ গরমে যেখানেই থাকুন না কেন সঙ্গে রাখুন প্লাস্টিকের বোতল ভর্তি পানি।
৩. তরল খাবার বেশি খানঃ
বিভিন্ন মাংস, ডিম এবং চর্বি জাতীয় খাবারের কথা ভুলে যান। তরল খান বেশি করে, দেখবেন শরীরটা সতেজ লাগছে বেশ। স্যুপ, ফলের রস-এগুলো বেশি খান। সবজি বাদ দেবেন না। শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে লবণ- আপনি খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। ডাবের পানি আর তরমুজে ভরিয়ে ফেলুন পাকস্থলী।
৪. পোশাক পরুন হালকা রঙেরঃ
এই গরমে একেবারেই ভুলে থাকুন গাঢ় রঙের পোশাকের কথা। এগুলো তুলে রাখুন ওয়ারড্রোবে। পোশাক পরুন হালকা রঙের। গাঢ় রঙের পোশাক রোদ শোষণ করে বলে আপনার গরম অনুভূত হয় বেশি। কিন্তু হালকা রঙের পোশাক রোদ যতটুকু না শোষণ করে তার চেয়ে প্রতিফলিত করে অনেক বেশি। তাই হালকা রঙের পোশাকে আপনি কেবল স্বাচ্ছন্দ্যই বোধ করবেন না বরং এই পোশাক আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে। গরমে সিনথেটিক পোশাক কখনোই পরবেন না।
৫. পারফিউম মাখুন দেখে-শুনেঃ
যদি গরম বেশি পড়ে, ভুলেও ভারী এবং কড়া গন্ধের পারফিউম মাখবেন না। কারণ কড়া পারফিউম আপনার শরীরে গরম লাগার ভাবটা বেড়ে যাবে। এ সময়ে একেবারে হাল্কা গন্ধের পারফিউম মাখুন। কিছু কিছু পারফিউম আছে যা মাখলে শরীর ঠান্ডা অনুভূত হয়। আজই খোঁজ করুন।
৬. বিরত থাকুন ধূমপান থেকেঃ
সিগারেটের কথা মুখেই আনবেন না এই গরমে। আগে সিগারেটের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন সেটা। ধূমপানে শরীর আরো গরম হয়ে উঠবে। বাড়বে ত্বকের শুষ্কতা। বরং তার বদলে খান একটি করে ভিটামিন-সি জাতীয় ট্যাবলেট। সজীব লাগবে নিজেকে।
সিগারেটের কথা মুখেই আনবেন না এই গরমে। আগে সিগারেটের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন সেটা। ধূমপানে শরীর আরো গরম হয়ে উঠবে। বাড়বে ত্বকের শুষ্কতা। বরং তার বদলে খান একটি করে ভিটামিন-সি জাতীয় ট্যাবলেট। সজীব লাগবে নিজেকে।
৭. পরিত্যাগ করুন চা, কফি ও অ্যালকোহলঃ
গরমের অত্যাচারে যখন আপনি অতিষ্ঠ তখন ভুলেও পান করবেন না চা, কফি বা অ্যালকোহল। এগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে আপনার শরীরে। বাড়িয়ে দেবে বেশি করে পানি শূন্যতা। আপনার তৃষ্ণা মেটাতে স্রেফ পানি পান করুন অথবা কোমলপানীয়। কিন্তু চা, কফি বা অ্যালকোহল- একেবারেই না।
৮. এড়িয়ে চলুন সূর্যালোকঃ
চেষ্টা করুন ছায়ার মধ্যে দিয়ে চলতে। রোদে গেলে মাথায় রাখুন চওড়া ক্যাপ, স্কার্ফ অথবা ছাতা। রিকশায় চড়লে হুড উঠিয়ে চলুন। ত্বকে মেখে চলুন সানস্কিন ক্রিম বা লোশন। রোদে বাইরে বেরুলেই সানগস্নাস পরে নিবেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন সানগস্নাসটি যেন চোখের সঙ্গে চমৎকার ফিটিং হয়। বেছে নিন ধূসর অথবা সবুজ রঙের কাঁচ। বাদামী রঙের কাঁচ হলে ভালো হয়। এই কাঁচগুলো সূর্যালোককে প্রতিহত করবে।
৯. গোসল করুন একাধিকবারঃ
সবচেয়ে ভালো হয় যদি ঠান্ডা বাথটাবে চুপচাপ শুয়ে থাকেন এবং মাঝে মাঝে সেখানে ছুঁড়তে থাকেন হাত-পা। কিন্তু তা সম্ভব না হলে অন্তত দিনে দু’তিনবার গোসল করুন। শরীরে তেল জাতীয় কিছু মাখবেন না। সময় একটু বেশি নিয়ে গোসল করুন-এমনকি রাতে শোয়ার আগেও। দেখবেন অনেক সতেজ আর ফুরফুরে লাগবে নিজেকে।
১০. শুয়ে পড় ন মেঝের ওপরঃ
ফোমের বিছানা, কিংবা জাজিম-তোষক গুটিয়ে রাখুন। ভালো করে ধুয়ে-মুছে সটান শুয়ে পড় ন মেঝের ওপর। আপনার কোমরে বা পিঠে ব্যথা থাকলে তো সোনায় সোহাগা। গরম তাড়ানোর পাশাপাশি ব্যথার চিকিৎসাও হয়ে গেল। মেঝের শীতল অনুভূতি শীতল করে তুলবে আপনার শরীর ও মনকে। আর মাথার উপর অবিরাম ছেড়ে রাখুন ফ্যানটা। দেখবেন গরম কোথায় পালায়।
মন্তব্যঃ গরমে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সাথে সাথে রোদ ও তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলতে হবে। যদিও বলা হয়েছে বেশি বেশি তরল খাবার গ্রহণ করতে, কাজেই হাতের কাছে রাখতে পারেন সাদা পানি, ডাবের পানি, বেলের শরবত, লেবুর পানি, লবন পানি। ধুলোবালি থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। যাদের শরীর প্রচুর ঘমার্ত হয় তারা কিছুক্ষণ পর পর অবশ্যই তরল খাবার গ্রহণ করবেন এবং সম্ভব হলে দিনে চারবার গোসল করবেন। গোসল করবেন শরীরটাকে কিছুটা ঠান্ডা করার পর। বাজারের সস্তা পানীয় গ্রহণ স্বাস্থ্যের অকল্যাণ বয়ে আনে। কাজেই গরমে সেগুলো বিষ মনে করাই উচিত।
**************************
ডাঃ একেএম মাসুদ পারভেজ,
মেডিক্যাল অফিসার,
সিআরপি, সাভার, ঢাকা।
E-mail: dr.masud@yahoo.com
দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ মার্চ ২০০৯
ডাঃ একেএম মাসুদ পারভেজ,
মেডিক্যাল অফিসার,
সিআরপি, সাভার, ঢাকা।
E-mail: dr.masud@yahoo.com
দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ মার্চ ২০০৯
0 comments:
Post a Comment