Featured Video

Pages

Monday, May 02, 2011

শিশুর যখন ডাক্তার প্রয়োজন


শিশুর অসুখ-বিসুখের কথা শিশুরা মুখ ফুটে বলতে পারে না তাই শিশুদের সুস্থ রাখতে বাবা-মায়ের চিন্তার অন্ত নেই। শিশুর আচরণ তার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্যই যথেষ্ট। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।  
অসুখের কথা শিশুরা প্রায় সময়ই ঠিকভাবে বলতে পারে না। তাহলে কিভাবে বুঝবেন আপনার শিশুটিকে ডাক্তার দেখাতে হবে? লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট ডা. সাবরিনা মিষ্টি। পরামর্শ দিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এহসান কাদির




যেহেতু সমস্যার কথা শিশুরা ঠিকমতো বলতে পারে না তাই ওদের রোগ নির্ণয়ে সময় লাগে। ফলে চিকিৎসা দিতেও দেরি হয়। কিন্তু বড়দের চেয়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা সহজেই অসুখ থেকে মারাত্মক বিপদের মধ্যে পড়তে পারে।
তাই শিশুদের অসুখ-বিসুখের ব্যাপারে বাড়ির অভিভাবক হিসাবে বাবা-মা, বড়দের ভূমিকাই বেশি। কিছু চিহ্ন আছে যা শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা দিলে তার চিকিৎসার ব্যাপারে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। মা-বাবা বা বাড়ির অভিভাবকরা সেসব বিষয় শিশুর মধ্যে দেখামাত্র দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেবেন সে বিষয়গুলো সম্পর্কে নিচে ধারণা দেওয়া হলো।

নবজাতকের ক্ষেত্রে
শহরে বেশির ভাগ শিশুর জন্ম হাসপাতালে হলেও গ্রামে বেশির ভাগ শিশুর জন্ম হয় বাড়িতে। সরকারি হিসাবে, শহর ও গ্রাম মিলিয়ে শতকরা ৮২ ভাগ শিশুর জন্ম হয় বাড়িতে। যা হোম ডেলিভারি নামে পরিচিত। দাই বা ধাত্রীর সহযোগিতায় ও কোনো চিকিৎসকের উপস্থিতি ছাড়াই জন্মদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। হাসপাতালে জন্মানো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডাক্তার উপস্থিত থাকে বলে বাচ্চার কোনো সমস্যা হলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন কিন্তু বাড়িতে জন্মানো বাচ্চার ক্ষেত্রে অভিভাবককেই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে দেখে নিন শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক আছে কি না, শিশুর হার্ট বিট বুকে কান পাতলে শুনতে পাচ্ছেন কি না, প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক কি না। এরপরও নবজাতকের মধ্যে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য করলে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
* জন্মের সঙ্গে সঙ্গে না কাঁদলে
* বাচ্চার গায়ের রঙ নীল হয়ে গেলে
* বাচ্চা ঠিকমতো শ্বাস প্রশ্বাস না নিলে
* নবজাতকের মুখ দিয়ে ফেনা বা ফেনার মতো কিছু বের হলে
* শিশুর ওজন খুব কম হলে। জন্মের সময় আড়াই কেজির নিচে হলে।
* শিশুর মাথার পেছনে, ঘাড়ে, পিঠে বা কোমরে বলের মতো কোনো ফোলা অংশ থাকলে।
* শিশু মলত্যাগ না করলে
* শিশু দুধ পান করতে না পারলে
* শিশুর মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হলে
* শিশু ক্রমাগত কাঁদতে থাকলে

এক মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে
* বাচ্চা হঠাৎ বুকের দুধ পান বন্ধ করলে বা পান করতে না পারলে
* এক নাগাড়ে কয়েক ঘণ্টা কান্নাকাটি করলে
* নাভি ৫-৭ দিনের মধ্যে শুকিয়ে না গেলে
* শিশুর জ্বর এলে
* শিশুর বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হলে
* হঠাৎ করে মলত্যাগ করা বন্ধ করলে
* ঘন ঘন বমি করলে
* পেট অনেকখালি ফুলে গেলে
* বারবার দুর্গন্ধযুক্ত মলত্যাগ করলে

মনে রাখবেন বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের দিনে ১০ বার বা তারও বেশি পায়খানা করতে পারে। এমনকি দুই দিনে একবারও পায়খানা করতে পারে। উভয়টাই স্বাভাবিক। কিন্তু পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে বা পায়খানা বেশি দুর্গন্ধযুক্ত হলে তা মোটেই স্বাভাবিক নয়।

এক বছর বয়স পর্যন্ত
এক বছর বয়সের মধ্যে শিশু কিছু কিছু কাজ করতে শিখবে, কিছু শব্দ বলতে পারবে বা বলতে চেষ্টা করবে কিন্তু যদি তা না শেখে তাহলে বুঝতে হবে তার অন্য কোনো সমস্যা আছে। অর্থাৎ বয়স অনুযায়ী তার বিকাশ স্বাভাবিক হচ্ছে না। তাই নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখুন।
* প্রথম মাসে শব্দ শুনে চোখ ফেরাতে পারবে। একটু মাথাও নাড়াতে পারবে।
* দ্বিতীয় মাসে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতে পারবে, মাথা একটু বেশি ওঠাতে পারবে।
* তৃতীয় মাসে বাবা-মার গলার স্বর ও মুখ চিনতে পারবে। খেলনা হাত দিয়ে ধরতে পারবে।
* চতুর্থ মাসে শব্দ শুনে হাসবে বা মুখ দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করবে। কামড় দেবে।
* পঞ্চম মাসে নাম শুনে তাকাবে (যদি শিশুকে প্রথম থেকে একই নামে ডাকা হয়), নিচের মাঢ়ির দাঁত উঠতে শুরু করবে বা দাঁত ওঠার লক্ষণ দেখা যাবে। বসিয়ে দিলে বসে থাকতে পারবে।
* ষষ্ঠ মাসে নিজে নিজে বসতে পারবে। শব্দের উৎস বুঝতে পারবে, মা-বাবার কোল থেকে অপরিচিত কারো কোলে গেলে কাঁদবে। হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবে।
* সপ্তম মাসে বসবে, হামাগুড়ি দেবে। অপরিচিত লোক দেখলে কাঁদবে বা তার কাছে যেতে চাইবে না।
* অষ্টম মাসে কোনো কিছু ধরিয়ে দিলে বা দাঁড় করিয়ে দিলে দাঁড়াতে পারবে, মা-বাবা বলতে পারবে বা বলার চেষ্টা করবে।
* নবম মাসে নিজে নিজে কোনো কিছু ধরে দাঁড়াবে। গ্লাসে চুমুক দিয়ে কিছু খেতে পারবে।
* দশম মাসে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই দাঁড়াতে পারবে। মা-বাবাকে চিনে ইশারা বা শব্দ করে কাছে ডাকবে।
* একাদশ মাসে কিছু বললে বা নিষেধ করলে বুঝতে পারবে।
* দ্বাদশ মাসে একপা দুই পা করে হাঁটতে চেষ্টা করবে। মা-বাবা ছাড়াও আরো দু-একটি শব্দ বলবে বা বলার চেষ্টা করবে।
যদি এরকম স্বাভাবিক বৃদ্ধি তার মধ্যে পরিলক্ষিত না হয়, তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, সব শিশুই যে একেবারে মাস হিসাবে সব কিছু করবে, তা কিন্তু নয়_কারো কারো ক্ষেত্রে একটু আগে বা পরে ব্যাপারগুলো ঘটবে। বড়দের এই স্বাভাবিকতাও বুঝতে হবে।

এক বছর বয়সের পর থেকে
এই বয়সে তারা বলতে শেখে তবে শব্দস্বল্পতা বা অভিজ্ঞতার অভাবে ঠিকভাবে বলতে পারে না। তাদের কথা শুনে বা আচরণ দেখে এই সময়টায় বুঝতে হবে তার সমস্যাগুলো। যেমন_
* সামাজিক মেলামেশা করতে পারছে কিনা
* কথা বুঝতে পারছে কি না
* ভাষা ও ভাবের আদান-প্রদান স্বাভাবিক কি না
* রাগ প্রকাশের ভঙ্গি স্বাভাবিক কিনা
* ভয় বা নিজের মধ্যে অতিরিক্ত গুটিয়ে থাকার প্রবণতা আছে কি না
এই বিষয়গুলো মা-বাবা অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি এই বিষয়গুলো স্বাভাবিক না থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শিশুরা সহজে রোগাক্রান্ত হয়, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম তাই রোগে আক্রান্ত হওয়া মাত্র নির্ণিত ও চিকিৎসা করা গেলে তা সবদিক থেকেই মঙ্গলজনক।

0 comments:

Post a Comment

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | cheap international calls