মুখ গহ্বর, ঠোঁট, জিহবা ও গলার শুরুর অংশের যেকোনো স্থানেই হতে পারে মুখের ক্যান্সার। দক্ষিণ
এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতোই আমাদের দেশেও মুখের ক্যান্সার অকাল মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ। শরীরের সব ক্যান্সারের মধ্যে মুখের ক্যান্সার হওয়ার হার শতকরা ২০ ভাগ।
গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিবছর ৩০ হাজার নতুন রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং ১০ হাজার রোগী অকালে মৃত্যুবরণ করেন।
কেন হয় মুখের ক্যান্সার?
* পান, সুপারি, সাদা পাতা সেবন ও গুল ব্যবহার
* মদ্যপান
* সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মি (ঠোঁটের ক্যান্সার এর জন্য দায়ী )
* মুখে ভাঙা দাঁতের ঘর্ষণ
* অস্বাস্থ্যকর মুখগহ্বর
* পুষ্টি ঘাটতি
* সেলেনিয়াম, ভিটামিন- এ, সি, ই, আয়রণ, জিংক ইত্যাদির ঘাটতি
* জিনগত ও বংশগত কারণ
* গবেষণায় দেখা গেছে, মুখের ক্যান্সারে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ভূমিকা রয়েছে।
ক্যান্সারের লক্ষণ
* মুখের যেকোনো অংশে লাল বা সাদা ঘা বা ক্ষত তিন সপ্তাহের স্থায়ী হলে
* খাবার গিলতে সমস্যা হলে
* মাঢ়িতে ঘা এবং হঠাৎ দাঁত নড়ে গেলে
তবে এসব লক্ষণ দেখা গেলেই যে ক্যান্সার হয়েছে তা ভাবার কারণ নেই। পরীক্ষা করে ক্যান্সার নিশ্চিত না হয়ে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়।
ক্যান্সার পরীক্ষা
* ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বায়োপসি (ক্ষত স্থান থেকে সামান্য মাংস নিয়ে পরীক্ষা করা) জরুরি। তবে কোনো ক্ষেত্রে এফএনএসি, সিটি স্ক্যান, এমআরআইয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
* শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ক্যান্সার ছড়িয়েছে কি না তা নির্ণয় করাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে বুকের এঙ্-রে, বোন স্ক্যান, পেট স্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষা রয়েছে।
যা করতে হবে
যদি সন্দেহ হয় তবে মুখ চোয়াল রোগবিশেষজ্ঞের (ওরাল-ম্যাঙ্েিলাফেসিয়াল সার্জন) পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া যাঁদের বয়স ৪০ এর ওপর, ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবনের অভ্যাস আছে বা ছিল, তাদের নিয়মিত (প্রতি ছয় মাস অন্তর) ক্যান্সারের স্ক্রিনিং করানো প্রয়োজন। মুখের ক্যান্সারের সঠিক চিকিৎসা না হলে গলা, ফুসফুস, কলিজা, পাকস্থলী, কিডনিসহ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। তাই দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের বিকল্প নেই।
ক্যান্সারের চিকিৎসা
মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রথম চিকিৎসা অপারেশন হলেও কেমোথেরাপিরও প্রয়োজন হয়। চিকিৎসার ধরন কি হবে তা নির্ভর করবে ক্যান্সারের বিস্তৃতি, রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু শরীর থেকে সরিয়ে ফেলাই অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য। অনেক ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে বিস্তৃত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্যালিয়েটিভ
সার্জারি করা হয়। এতে ক্যান্সার নির্মূল না হলেও রোগীর কষ্ট লাঘব হয়। অপারেশনের পাশাপাশি রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সার ধ্বংস করতে সাহায্য করে। যদিও সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে মুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক ঘা নির্মূলে কেমোথেরাপির ভূমিকা খুব বেশি কার্যকর নয়। কিন্তু অপারেশন, রেডিওথেরাপির পাশাপাশি শরীরে ক্যান্সার বিস্তার রোধে এর ভূমিকা রয়েছে। ক্যান্সারের চিকিৎসাপদ্ধতি অনেক দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল। মৃত্যুর হারও বেশি। তাই প্রয়োজন সচেতন হওয়া, যাতে রোগটি হওয়ার আগেই ঠেকানো যায়। তাই ধূমপান, জর্দ্দা, পান, সুপারি, গুল ইত্যাদি ত্যাগ করুন, নিয়মিত মুখের পরিচর্যা করুন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন, মুখের কোনো ঘা তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে দ্রুত ওরাল- ম্যাক্সিলো ফেসিয়াল সার্জনের পরামর্শ নিন।
ডা. মোর্শেদ আসাদউল্যাহ তানভীর
ওরাল-ম্যাক্সিলো ফেসিয়াল সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
adorn.doms@gmail.com
0 comments:
Post a Comment