Featured Video

Pages

Tuesday, March 15, 2011


ভূস্তরের তলদেশের দুই প্লেটের সংঘর্ষে কেঁপে উঠেছিল জাপান

প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে দুটি প্লেটের (ভূস্তর) মধ্যে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা চলছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ইউরেশীয় প্লেটের নীচে। ইউরেশীয় প্লেট তাতে বাধা দিচ্ছিল। তার জেরে সমুদ্রের তলদেশে ওই অংশে তৈরি হচ্ছিল শক্তি। এক সময় সেই শক্তি এতটাই জমে গেল যে, তাকে আর ধরে রাখা গেল না। সমুদ্রের তলদেশে সেই সঞ্চিত শক্তি একসঙ্গে নির্গত হল। যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটিকে এক ধাক্কায় ঢুকিয়ে দিল ইউরেশীয় প্লেটের তলায়। সমুদ্রের তলদেশে বাড়ল ফাটল। সৃষ্টি হল রিখটার স্কেলে ৮.৯ তীব্রতার প্রচণ্ড ভূমিকম্প।

সমুদ্র তলদেশে নির্গত বিপুল পরিমাণ শক্তি সমুদ্রের জলকে ফুলে ফাঁপিয়ে নীচ থেকে উপরে তুলে আনল। তীব্র গতিতে বিপুল শক্তি নিয়ে সেই জল আছড়ে পড়ল জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে। এটাই সুনামি। ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই ভূ-প্রাকৃতিক ক্রিয়ায় সমুদ্রের তলায় যে শক্তি নির্গত হল, তার তীব্রতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা পরমাণু বোমার শক্তির তিন কোটি গুণ। সেই দুরন্ত শক্তিই সৃষ্টি করেছে সুনামি। সমুদ্রের জল ১০ মিটার উঁচু হয়ে ছুটে গিয়ে আছড়ে পড়েছে সমুদ্রতটে। খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর। ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে উপকূলে নোঙর করে থাকা জাহাজকেও।
শুক্রবার জাপানের হনসু দ্বীপকে তছনছ করে দেওয়া সমুদ্রদানব সুনামির নামের উৎপত্তি জাপানেই। সু মানে বন্দর। নামি, অর্থাৎ ঢেউ। যদিও তার ধ্বংসলীলা বন্দর ছাড়িয়ে বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইণ্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞ জ্ঞানরঞ্জন কয়াল জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশে এ দিন সুনামি হয়েছে, সেখানে সমুদ্রের নীচে পাশাপাশি রয়েছে দু
টি প্লেট। জাপান খাত (ট্রেঞ্চ) নামে একটি খাতে ওই প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের অবস্থান। প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ মিলিমিটার করে ঢুকে যাচ্ছে ইউরেশীয় প্লেটের নীচে। আর দুটি প্লেটের এই ঘর্ষণে যে শক্তি তৈরি হচ্ছে, তা সঞ্চিত হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশেই। এ দিন বহু দিনের সঞ্চিত শক্তি এক সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এত দিন ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি যা করতে চাইছিল, তা এ দিন সম্ভব হল। দুই প্লেটের ঘর্ষণজনিত সঞ্চিত শক্তি এ দিন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১০০-১২৫ বছর পর পর এ রকমটা হতেই পারে। এক সেকেণ্ডের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি ইউরেশীয় প্লেটের তলায় অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিটার ঢুকে গেল। তার জেরেই ওই ভয়ঙ্কর মাত্রার ভূমিকম্প। ওই ভূ-কম্প বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, এই ঘটনায় ২০ কোটি টন ট্রাইনাইট্রোটলুইন এক সঙ্গে ফাটলে যে শক্তি নির্গত হয়, তার সমান শক্তি তৈরি হয়েছে সমুদ্রের নীচে। ২০০১ সালে গুজরাতের ভুজে ৭.৭ তীব্রতার ভূমিকম্পে যে শক্তি উৎপন্ন হয়েছিল, এ দিন প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ তার ১০ গুণ।
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প সমুদ্রের নীচে এমন ভাবেই ফাটল সৃষ্টি করেছিল। আর সে ক্ষেত্রে ওই এলাকায় থাকা ভারতীয় প্লেটটি দক্ষিণ-এশীয় প্লেটের নীচে এক ধাক্কায় অনেকটাই ঢুকে গিয়েছিল। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং তামিলনাড়ুর উপকূল এখনও সেই ঘটনার ফলে তৈরি হওয়া সুনামির ধ্বংসলীলার সাক্ষী। ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জাপানের সমুদ্রের নীচের ভূস্তরে দু
টি প্লেটের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়, তার উপরে নির্ভর করছে সমুদ্রের নীচে ফাটলের আকার। ওই ফাটল বাড়তে থাকলে তা স্থায়ী ভৌগোলিক পরিবর্তনও ঘটাতে পারে।
ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এ দিন যেখানে ভূকম্প হয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরের তলার ওই অঞ্চলে রয়েছে সার সার আগ্নেয়গিরি। যাকে বলা হয়
অগ্নিবলয়। সেখানে মাঝে মধ্যেই ভূকম্পন লেগেই থাকে। গত বুধবারও প্রশান্ত মহাসাগরের তলায় ঠিক ওই জায়গাতেই ৭.৭ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়েছে। তৈরি হয়েছিল ছোটখাটো একটি সুনামিও। সুমাত্রার যে অঞ্চলে ভূমিকম্পের কারণে ২০০৪ সালে সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল, সেটিও অগ্নিবলয়ের মধ্যেই পড়ে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্রের সমীক্ষা জানাচ্ছে, গত ৫০ বছরে ওই অগ্নিবলয়ে ২১টি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। যার প্রতিটিই সুনামির জন্ম দিয়েছে।
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন ভূমিকম্প ছাড়াও সুনামি তৈরি হতে পারে। যেমন, সমুদ্রের তলায় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটালে কিংবা সেখানে কোনও ভাবে ধস নামলে। তবে ভূমিকম্প থেকেই তার তৈরির সম্ভাবনা সব থেকে প্রবল।

0 comments:

Post a Comment

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | cheap international calls